ডাইনি - রুবি মুখার্জি
জিজ্ঞেস করছো
কেমন আছি ,মা??
তা আছি বেশ ভালো
গেল বছর বন্যায়,
ছোটো ছেলেটা
ডুবে গেল।
তার আগের বছর
হলো ভীষণ ঝড়,
সেবার ঘর চাপা পড়ে
মরল আমার বর।
আর ঐ যে গো
যে বার এলো ফণী,
সত্যি ই মা সেবার
সাপের ছোবলেই মরল
আমার মেজো ছেলে,ননী।
একটা মেয়েও ছিল
দিয়েছিলাম বিয়ে,
নিত্য বরের মার খেয়ে
মরল সে গলায় দড়ি দিয়ে।
আর আমার বড়ো ছেলে, কেলে
পেটের দায়ে চুরি করে
আছে এখন জেলে।
বড়ো বৌমা বলে
আমি নাকি ডাইনি,
ছেলে, মেয়ে, বর
কাকে না আমি খাইনি।
তা সে বৌটাও পালিয়ে গেল
বুধবার দিন রাতে,
ইষ্টিশন এর কাছে
কোন টোটোওয়ালার সাথে।
নাতনি টাকে ফেলে গেল
বোধহয় আমার তরে,
এতো অভাবের মধ্যে
ওরে মানুষ করি কেমন করে।
ইচ্ছে করে সত্যি ই মাগো
ডাইনি হয়ে যাই,
ভগবান কে খুঁজে নিয়ে
তাঁর রক্ত চুষে খাই।
ভগবানের তরে আমি
কি করেছি অপরাধ?
সবাই কে কেড়ে নিয়ে
পুরলো কি তার সাধ?
তোমরা মাগো আছো ভালো
ভগবানের আশীষ মাথায় নিয়ে,
তবে আমি কিন্তু তাঁর নামে পিণ্ডি
দেব, কাল ই গয়া গিয়ে।
সব গিয়েও শেষ পর্যন্ত
নাতনি হলো পায়ের বেড়ি,
ওটা কে ওর মা নিয়ে গেলে
মরতে করতাম না মাগো দেরি।
ভোরবেলা তে শাকপাতালি
তুলে ছিলাম ধামাইটির মাঠে,
সেই গুনি মা বেচে গেলাম
এই শেওড়াফুলির হাটে।
এখন উঠতে হবে মাগো
পথ যে অনেক হবে যেতে,
ঘরে গিয়ে ভাত চড়ালে
নাতনি টি পাবে দুটি খেতে।
তোমার সাথে মাগো যদি
ভগবানের দেখা হয়,
বোলো তাঁরে ডাইনির আর
দুঃখের নেই ভয়।
সব কাটাকে খেয়েছি আমি
এবার খাবো তাঁকে,
আমার থেকে তিনি যেন
সাবধানে তেই থাকেন।
---সমাপ্ত---
কবি পরিচিতি
লেখিকা রুবি মুখার্জি শ্রীরামপুরে চাতরা শীতলা তলায় জন্মগ্ৰহণ করেন। শ্রীরামপুর গার্লস কলেজ থেকে স্নাতক। তবে পুঁথিগত বিদ্যা প্রতি কোনদিন ই অনুরক্ত ছিলেন না। জন্মসূত্রে একান্নবর্তী পরিবারের মেয়ে। পরিবারের মানুষদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের টানাপোড়েন লেখিকার মনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চাপে মানুষের চরিত্রের রং বদল কে কলমের আঁচড়ে বন্দী করার জন্যই লেখিকার কলম ধরা। ছোটবেলা থেকেই গল্পের বই এর প্রতি প্রবল টান। মানুষের সাথে মিশতে খুব ভালোবাসেন। অবসর সময় গল্পের বই পড়ে এবং গাছের পরিচর্যা করে অতিবাহিত করেন। বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়। হাসতে এবং মানুষ কে হাসাতে খুব ভালোবাসেন। তবে ট্রাজেডি ধর্মী গল্প এবং কবিতার জন্য খ্যাতি লাভ করেছেন। অবেলা, তৃবর্ণ, বলি, অন্তর দহন ইত্যাদি বড়ো গল্প ছাড়াও লেখিকার অনেক অনুগল্প প্রকাশ পেয়েছে।
Join the conversation