ক্লান্ত হয়ো না নারী - সংহতি সিনহা ব্যানার্জী
১৪ ই আগস্ট ২০২৪ , জাস্টিস ফর আর.জি.কর. শ্লোগানে রাত দখলের আহবানে লেখা
ক্লান্ত হয়ো না নারী
সংহতি সিনহা ব্যানার্জী
যত ঘণ্টাই দাও পরিষেবা
যতই তুমি পড়ে থাকো ডাক্তারী,
রাত বাড়লেও আর কক্ষনো যেন
ক্লান্ত হয়ো না, ভুল করেও যেন
আর কখনোই তুমি
ক্লান্ত হয়ো না নারী।
তুমি করো যে মানুষের সেবা
ভাবোনা কখনো সে পুরুষ না নারী ,
তুমি যে যন্ত্র, পুরুষ নয় তো,
তাইতো কখনো সেমিনার হলে
বা কখনো কোথাও কাজ ফুরালেও
ক্লান্ত তোমায়, হতে যে নেই নারী ।
তেমন কিছু বিপদ বুঝলে
স্টেথোস্কোপটি খুলে রেখে
হাতে তুলে নিও তরবারী।
রাত যতই গভীর হোক
ক্লান্ত হয়োনা ,ঘুমিয়ে পড়োনা,
জেগে থেকো তুমি নারী।
যতই তোমার তন্দ্রা নামুক
যতই দুচোখে ভাসুক স্বপ্নতরী ,
তোমাকে যে একা থাকতে নেই
হতে পারো তুমি, উচ্চ ডিগ্রিধারী ।
জেনো পিশাচ এর কাছে তোমার শরীর
কেবল একটি মাংসপিণ্ড ,
যাই হও তুমি, নেই যে ওদের মানবিকতা,
ওরা বুঝে গেছে, সবশেষে তুমি
বড়ই তুচ্ছ ,সামান্য এক নারী।
এবার দেখাই মোদের একতা
হোক সে চেনা অথবা অচেনা ,
জাত পাত তুলে,রাজনীতি ভুলে
আজ একটি নারীর পাশে দাঁড়াবো
লক্ষ লক্ষ নারী।
ওরা জানেনা অথবা বুঝেও বোঝেনা ,
সমাজের বুকে আমাদের থাকা
ঠিক কতখানি দরকারী।
ওরা ভাবছে বোধহয়
আমরা যারা ভালোবাসি শাড়ি চুড়ি,
আমাদের বুক ফাটলেও মুখ ফোটে না,
আমরা কেবল স্নেহ মায়া আর মমতায় ভরা
ক্ষমাশীল,উদার মনের অধিকারী।
যতই দোষ করুক পুরুষ
একদিন ঠিক ক্ষমা করে দেবে
স্নেহময়ী এই নারী।
ওদের এবার জানতে হবে
আমরা কোমল হাতেও ধরতে পারি
ধারালো কাটারি, ছুরি।
কাজল পড়া চোখেও আমরা
আগুন জ্বালাতে পারি।
আমরা কন্যা কিংবা বধূমাতাটি
নয়কো শুধুই ঘরের লক্ষ্মী,
পরিবারের স্বার্থে যেমন
ঘর সামলে বেরোই করতে চাকরি,
তেমনি অস্ত্রধারী দশভূজার মতো
মানুষ রূপী অসুরদেরকে নিধন ও আমরা করি।
মনে রেখো একথা ,শতরূপা মোরা,
লক্ষ্মী কিংবা সরস্বতীর মতো
নয়কো শুধুই শান্ত সুশীলা নারী ।
সময় বুঝলে আমরাই হই অগ্নিকন্যা,
নিমেষে দেবী কালিকা হয়েও উঠতে আমরা পারি।
তাই ,অন্যায় দেখে উদাস না থেকে
এসো গো সত্যিকারের পুরুষ বন্ধু,
এসো গো সকল নারী,
কাপুরুষ যারা জানেনা যে তারা,
প্রয়োজনে নারীরা হতে পারে চামুণ্ডা রূপী
ভয়াল শক্তিধারী।
নিরাপদ নয় কোন জায়গাই,
হোক সে তোমার কর্মক্ষেত্র ,
রাস্তাঘাট বা বাড়ি ।
সর্বত্রই চোখ কান যেন
খোলা রাখতে পারি।
অনেক হয়েছে মোমবাতি ,
চলো ,এবার মশাল ধরি।
হবেনা আর মৌন মিছিলে,
এসো শঙ্খ বাজাই সকলে মিলে,
ধর্ষিতা ওই পড়ুয়া চিকিৎসকের পাশে দাঁড়িয়ে
চলো চিৎকার করি।
সভ্যতাকে বাঁচাতে এবং
আগামী প্রজন্মকে আলোর পথে এগিয়ে দিতে
আজকে বরং হাতে হাত রেখে রাত্রি দখল করি।
আটাত্তরতম স্বাধীনতা দিবসের পূণ্য প্রভাতে
এবং তার আগের রাত্রে
এসো নারীকে বাঁচাই সমাজ বাঁচাতে,
আঁধার ঘোচাই ,মিলি সকলেতে।
লিঙ্গ, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ,
পায়ে পায়ে পথে জমায়েত হতে
আবালবৃদ্ধবনিতা
যেন কেউ না আমরা ডরি।
চলো প্রতিবাদী গানে, কবিতা, শ্লোগানে ,
আজ রাত্রী দখল করি।
নারীর সম্মান রক্ষা করতে
যেন কখনো আর না হারি,
এসো সকলে শপথ করি।
শুধু মনে রেখো আর কক্ষনো যেন
একলা একলা
ক্লান্ত হয়োনা নারী।
----সমাপ্ত----
কবি পরিচিতি
সংহতি সিনহা ব্যানার্জী
জন্ম হুগলি ইমামবাড়া সদর হসপিটালে , জন্মদিবস পয়লা মে। পিতার নাম ৺অমিতাভ সিনহা, মাতা শ্রীমতী গৌরী সাহা সিনহা। স্বামী দেবাশিস ব্যানার্জী ও একমাত্র কন্যা দেবারতি ব্যানার্জী।হুগলী বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে সংহতি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার রথতলা রাজলক্ষ্মী বালিকা বিদ্যামন্দিরে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন ও সেখান থেকেই ২০০৩ সালে মাধ্যমিক ও ২০০৫ সালে উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। মাধ্যমিকে বিদ্যালয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ও উচ্চমাধ্যমিকে বিদ্যালয়ের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন।এরপর হুগলী মহসীন কলেজ থেকে রসায়নে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা ও ২০০৮ সালে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ। কর্ম জীবন শুরু হয়,২০১৩ সালে,পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ব্যুরো অফ আ্যপলায়েড ইকনমিক্স অ্যান্ড সট্যাটিকটিকস এ অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্পিউটর হিসাবে। বর্তমানে হারিট উচ্চ বিদ্যালয়ে পিওর সায়েন্সের শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত। ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশন নিয়ে মাষ্টার ডিগ্রিতে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ।অবসর সময়ের শখ অঙ্কন,সঙ্গীত ও সাঁতার অনুশীলন এবং ইংরেজি বা বাংলা গল্পের বই পড়া। International( invitation) Masters' Athletic Meet-2022 এ ৪০০ মিটার রানে তৃতীয় স্থান অর্জন। স্রোতস্বিনী, ইচ্ছেডানা, কালবৈশাখী, প্রতিভা সন্ধানে প্রভৃতি পত্রিকায় ও শব্দনীড় কবিতা সংকলন এ লেখালেখি।২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হয় সংহতির প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ "মনের রংধনু"।
Join the conversation