কমফোর্ট জোন - সুমির রং

               

           কমফোর্ট জোন

         সুমির রং 



একটা বয়সের পর প্রেমের ধারণাটা আমার কাছে অন্যরকম হয়ে গেলো। আগে ফুচকার দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে হুট করে কারো চোখে চোখ আটকে গিয়ে প্রেমে পড়তাম। কিন্তু এখন? এখন সেই বয়সটা পেরিয়ে এসেছি, সেই দিনগুলোও ফিকে হয়ে গেছে। এখন আমার প্রেমের সংজ্ঞা বদলে গেছে, অনেকটাই।
একদিন সন্ধ্যাবেলায়, কাজের চাপের পর ক্লান্ত শরীরে আমি বাড়ি ফিরছিলাম। আমার মনে হলো, কেন যেন আজকাল কারো চেয়ে ফুল-লতাপাতাই আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয় লাগে। আর দুই ঘণ্টার কফি ডেটের চেয়ে কম্বলের নিচে গুটিশুটি মেরে পড়ে থাকাটা যেন বেশি আরামদায়ক মনে হয়।
বাসায় ফিরে সোফায় বসতেই আমার পুরোনো বন্ধু সুনীলের কথা মনে পড়লো। ওর সাথে অনেকদিন পর দেখা হলো সেদিন। ওর সাথে কথা বলার সময় মনে হলো, এটাই তো সেই কমফোর্ট জোন যার খোঁজ আমি এতদিন ধরে করছিলাম। ওর সাথে সবকিছু শেয়ার করতে পারি, কোন জড়তা নেই, কোন লুকোচুরি নেই।
সুনীল হলো সেই মানুষ, যার সামনে আমি উষ্কখুষ্ক চুল, পুরোনো জামা পরে, সদ্য ঘুম থেকে উঠে ফুলকো লুচির মত চেহারা নিয়েও দাঁড়িয়ে পড়তে পারি। ওর সামনে নিজেকে মেলে ধরতে কোনো জড়তা কাজ করে না, বরং একটা অবর্ণনীয় স্বস্তি অনুভব করি।
সুনীলের সাথে আমার সম্পর্কটা ভিন্ন। আমরা কেউ কাউকে প্রেমের প্রস্তাব দিইনি, কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা যেন একটা গভীর ভালোবাসারই প্রতিফলন। সারাদিনের ক্লান্তি, কাজের চাপ, জীবনের জটিলতা সবই যেন সুনীলের সামনে গিয়ে মিলিয়ে যায়। ওর কাঁধে মাথা রাখলে মনে হয়, সারাদিনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে সুনীল একটা ফুলের বাগান করতে শুরু করেছিল। আমি হাসি-তামাশা করতাম, বলতাম, "তুই ফুলগাছ নিয়ে এত মেতে আছিস কেন?" ও শুধু হাসতো, বলতো, "ফুলের মধ্যেও যে একটা শান্তি আছে, সেটা বুঝবি একদিন।" সত্যিই, এখন বুঝি ওর কথার মানে। ফুলের মধ্যে সেই নিঃস্বার্থ সৌন্দর্য খুঁজে পাই, যা মানুষের মাঝে অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না।
সুনীল আর আমার দেখা হওয়ার দিনগুলো যেন আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটা। আমরা দুজনে মিলে কফির কাপ হাতে নিয়ে বসি, কথা বলি, হেসে উচ্ছ্বল হই। সুনীল জানে আমার প্রতিটা সুখ-দুঃখের কথা, আমার প্রতিটা স্বপ্ন-আশার কথা। ওর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সবটুকু মেলে ধরা যায়, কোনো আবরণ ছাড়াই।
একদিন সুনীল হঠাৎ বললো, "জানিস, তুই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। তোর সাথে কথা বললেই সব কিছু সহজ হয়ে যায়।" আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম, চোখে জল এসে গেলো। বললাম, "সুনীল, তুইও আমার জীবনের সেই কমফোর্ট জোন, যেখানে গিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচা যায়।"
এই বয়সে এসে বুঝেছি, প্রেম মানে শুধু চোখে চোখ আটকে গিয়ে প্রেমে পড়া না। প্রেম মানে সেই কমফোর্ট জোন, যেখানে নিজের সবটুকু নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়া যায়। যেখানে কারো কাঁধে মাথা রেখে সারাদিনের ক্লান্তি ফুরিয়ে যায়। সুনীল আমার সেই কমফোর্ট জোন, যে আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে সুন্দর করে তোলে।
সুনীলের সাথে আমার এই সম্পর্কটা যেন এক গভীর ভালোবাসার গল্প। আমাদের গল্পে কোনো রোমান্টিক ডিনার নেই, কোনো বিশেষ দিনের উদযাপন নেই, শুধু আছে একে অপরের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর কমফোর্ট। এই সম্পর্কটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া, সবচেয়ে বড় উপহার।



                       ----সমাপ্ত----

                   লেখক পরিচিতি


নাম- সুমির রং 
ঠিকানা-
গ্রাম- ১ নম্বর ভূবনখালী 
পোষ্ট- রাধাবল্লভপুর 
থানা- কুলতলী
জেলা- দক্ষিণ 24 পরগনা
পিন- 743349
মোবাইল নম্বর- 9883430740