হনুমানের কীর্তি - দেবারতি ব্যানার্জী।
হনুমানের কীর্তি
দেবারতি ব্যানার্জী।
দুষ্টুমি করলে আমার মা যে নামে আমাকে ডাকে সেই নামেই আমি একটি গল্প তোমাদের বলছি। আমরা আগে চন্দননগরে যে বাড়িতে থাকতাম , সেখানে পাশের বাড়িতে একটা পোষা হনুমান থাকতো। হনুমানটার নাম ছিল রুকু। আমি যখন ছোটবেলায় খাবার খেতাম, আমার মা আমাকে কোলে করে নিয়ে ঘুরে ঘুরে খাওয়াতো। দুপুরবেলা খাবার সময় আমি রোজ ওই হনুমানটার সঙ্গে দেখা করতাম জানলা দিয়ে। পাশের বাড়ির ছাদে তখন হনুমানটা খাঁচার মধ্যে থাকতো। ওই পার্টির একটা দুষ্ট লোক ছিল।সেই হনুমান টাকে দেখাশুনা করত আবার মাঝে মাঝেই খুব মারতো। রুকুর সঙ্গে কথা বলতাম যখন সে আমাকে দেখাতো ওর পায়ে ,হাতে কোথায় কোথায় মেরে লাল করে দিয়েছে। আমি ওকে বলতাম হরে কৃষ্ণ নাম কর তাহলে ওই দুষ্টু লোকের কাছ থেকে একদিন ঠিক বাঁচবি। একদিন খেতে খেতে জানালায় গিয়ে দেখি, পাশের বাড়ির ছাদে রুকু আর নেই। কদিন বাদে জানলাম রুকুকে ওরা যেখান থেকে নিয়ে এসেছিল সেখানেই পাঠিয়ে দিয়েছে।
তারপর কিছুদিন পরে আমরাও চন্দননগর থেকে চলে এলাম হুগলিতে। এখানে আসার পর সন্ধ্যা পিসিকে আর পাশের বাড়ির ভারতী দিদাকে আমি এই গল্পটা একদিন বলেছিলাম। সন্ধ্যা পিসি এই কথা শুনে আমাকে ওনার একটা অভিজ্ঞতার কথা বললেন। একদিন নাকি সন্ধ্যা পিসি সকাল বেলা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। এই সময় একটা হনুমানের ছানা সন্ধ্যা পিসির কোলে উঠে পড়েছিল। সন্ধ্যা পিসি তো ভয়ে কি করবে বুঝবে না বুঝতেই, সন্ধ্যা পিসির গলা ছেড়ে হনুমান ছানা আবার অন্য গাছে চলে গেল। এরকম দুবার পরপর হওয়ার পর সন্ধ্যাপিসি নাকি ওই ওই সময় ওই রাস্তা দিয়ে একা যাওয়াই ছেড়ে দেয়।
ভারতিদিদারা বর্ষাকালে ভুটটা বিক্রি করে। তাই ওই সময় ওদের বাড়িতে অনেক কাঁচা পাকা ভুট্টা থাকে। একদিন সকালবেলা আমি জানালায় বসে জলখাবার খাচ্ছি। ভারতী দিদা বাড়িতে তালা দিয়ে কোথায় গেছে। এমন সময়একপাল হনুমান এসে ভারতী দিদার টালির চালে বসে আছে। কয়েকটা হনুমান আমাদের বাড়ি এসে সব গোলাপ ফুল গুলো খেয়ে নিল। আমি ওদের “এই হনুমান কলা খাবি ..”বলে জানলা দিয়ে চার পাঁচটা কলা ছুড়ে দিলাম। একটা দুটো কলা খেয়েই হনুমান গুলোর চোখ পড়ল ভারতী দিদার বারান্দায় রাখা ভুট্টার দিকে। তারপর মনের সুখে যত পারল ভুট্টা খেলো আর তারা বাড়ি ভুট্টার খোলা ছড়িয়ে নোংরা করল। ভারতী দিদা বাড়িতে এসে দেখে সব ভুট্টা খেয়ে নিয়েছে। তার সাথে ছোট আমগাছ, পেঁপে গাছের সব পেঁপে।
আমার দিদার বাড়িতেও শুনেছি মাঝে মাঝেই দল বেঁধে হনুমান আসতো। একবার নাকি দিদার বড়ো এক কৌটো বিস্কুট নিয়ে ছাদের পাঁচিলে বসে হনুমানরা সব খাচ্ছিল। দিদা হনুমান গুলোকে বলেছিল, “খাচ্ছিস খা, খাওয়া হলে কৌটোটা দিয়ে যাস।”হনুমান বা দিদার কথা বুঝতে পেরেছিল কিনা জানিনা, তবে খাওয়া শেষ হলে কৌটোটা ছুঁড়ে উঠোনে ফেলে রেখে গেছিল।
আর একদিন হয়েছে কি। আমি স্কুল থেকে এক ঠোঁয়া বাদাম কিনে বাদাম খেতে খেতে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন একটা বাঁদর আমার কাছে লাফিয়ে এসেছে। আমি ভয়েতে বাদামের রাস্তায় ফেলে দিয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে এসেছি। তারপর বাড়ি এসে দূর থেকে দেখি, আরো চারটে বাঁদর এসে বাদামের ঠোঁয়া থেকে বাদাম ভাগ করে খাচ্ছে।
আমরা মা ,বাবা, অপু দাদা মিলে যেবার ত্রিকুট পাহাড়ে বেড়াতে গেছিলাম, এই পাহাড়ে গিয়ে দেখি ছোট থেকে বড় বাঁদর রাস্তায় মুড়ি-মুড়কির মতো ছড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করছিল দুই একটা কচি বাঁদর ছানাকে ব্যাগে পুড়ে নি। অপু দাদা ওখানকার সিনসিনারি আর বাঁদর গুলোর ছবি তুলছিল। আমরা পাশেই একটা ঢিবির উপর বসে ছিলাম। হঠাৎ একটা লাল বাঁদর এসে, মায়ের ঘাড়ের উপর দিয়ে লাফিয়ে, অপু দাদার কাঁধে উঠে পড়ল। শুনতে পেলাম অপু দাদা বলছে “ছাড়! ছাড়!”। বাবা তাড়াতাড়ি করে আমাকে কোলে নিয়ে ওখান থেকে দৌড়ে নিচে নেমে এসেছে। পরে দেখি বাঁদরটা অপুদাদার পিঠে কামড় দিয়ে চলে গেছে। আমরা তো ওখানে নতুন বেড়াতে গেছি। ওখানকার রাস্তাঘাট ও চিনি না। আমরা যে গাড়ি ভাড়া করেছিলাম সেই ড্রাইভারকাকু একটা হসপিটালে নিয়ে গিয়ে অপু দাদাকে প্রাথমিক চিকিৎসা করালেন। তারপর ওকে একমাস ধরে ইনজেকশন নিতে হলো।
এখনো মাঝে মাঝে পাড়ায় হনুমানআসলে আমি সব দরজা জানালায় ছিটকিনি দিয়ে , লুকিয়ে লুকিয়ে একটা ছোট জানলার ফাঁক দিয়ে ওদের কীর্তিকলাপ দেখি।
------সমাপ্ত-------
Join the conversation