দুই বোন - সাদিয়া আফরিন
দুই বোন
(রূপকথার অনুগল্প)
সাদিয়া আফরিন
এক দেশে এক রাজা ছিল। রাজার ছিল দুই মেয়ে। দুই মেয়েকে নিয়ে রাজা খুবই চিন্তিত ছিলেন কারন সে মারা গেলে কে হবে রাজ্যের উত্তরাধিকারী। একদিন রাজা বনে শিকারে বের হলেন। এক বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে রাজা সহ তার সকল সৈনিক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। রাজা বিশ্রাম নেওয়ার ইচ্ছা পোষন করল। সবাই একটা বড় গাছের নিচে আশ্রয় নিল। হঠাৎ রাজা স্বপ্নে দেখল তার এক মেয়ে তাকে বাবা বাবা বলে ডাকছে। আর কোন একদল ডাকাত অকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। রাজার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল সে বুঝতে পারল না তার কোন মেয়ে তাকে এভাবে ডাকছে। তার মনে যেন সংশয় জন্মালো। সে সৈনিক দের নিয়ে দ্রুত বাড়ির পথে রওনা হলো। বাড়িতে গিয়ে দেখল তার দুই কন্যা মিতা ও গীতা ঠিক আছে। মিতা ছিল রূপে, গুনে যেমন, তেমনি ছিল কাজ কর্মে। অন্যদিকে গীতা দেখতে সুন্দর হলেও মিতার এক তৃতীয়াংশ।সে বাড়ির কোন কাজ করনা।সে সর্বদা নিজের সাজসজ্জা নিয়ে ব্যাস্ত থাকত। সেই গ্রামে ছিল এক দুষ্টু ব্যাক্তি। যে রাজার রাজ্য পাবার জন্য বিভিন্ন বুদ্ধি করত। জন্য হঠাৎ একদিন সে গীতাকে বলল সে যদি তাকে বিয়ে করে তবে সে তাকে এমন কিছু উপহার দেবে যা তাকে মিতার দ্বিগুন সুন্দরী করবে। গীতা তাতে রাজি হলেও রাজা তাতে রাজি হলো না। কারণ বড় মেয়ে বাদ দিয়ে ছোট মেয়ের বিয়ে তিনি দিতে চান না। গীতা রাগে, অভিমানে এক রাতে বাড়ি থেকে চলে গেল। সকালে রাজা দুষ্ট লোকটির কাছে খোঁজ নিয়ে দেখলেন কিন্তু সেখানে সে নেই। রাজা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ভাবলেন তাহলে কী তার স্বপ্নই সত্য হলো। এদিকে মিতা প্রায়, জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। সে ছোট বোনকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসত। সারাদিন কেটে গেল। কিন্তু গীতার কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। সেই রাতে মিতাও গিতার খোঁজে বেরিয়ে পড়ল। সকালে মিতাকে না পেয়ে রাজা প্রায় অস্থীর হয়ে উঠলেন। তিনি কী করবেন বুঝে উঠতে পারলেনা। এসবের জন্য তিনি নিজেকে দোষী, ভাবতে লাগলেন। এদিকে গীতা হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সারাদিননা খেয়ে তার শরীর যেন অচল হয়ে পড়েছে।" সে যেতে যেত দেখল এক দল পিঁপড়া যাচ্ছিল। হঠাৎ একটা পিঁপড়া তার পায়ের নিচে পড়ল ফলে অন্য পিপড়া গুলো সেখান থেকে সরে গেলে। অতঃপর আহত পিঁপড়াটাকে তার সঙ্গীরাই টেনে নিয়ে গেলো। এই দেখে সে বাড়ির সকলকে খুব মনে করতে লাগল। ভাবল তার বাড়ির সবাই তার থেকে দূরে সরলে ও তারাই তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসবে। বাইরের কেউ নয় । এই যেমন পিঁপড়া টাকে পিঁপড়াই নিয়ে গেল কিন্তু সে তাকে আঘাত দিয়েও তার জন্য কিছু করল না। এদিকে সে পথ হারিয়ে ফেলেছে তাই আর বাড়ি ফিরতে পারছে না। এদিকে মিতা হাঁটতে হাঁটতে একটা কুঠরির কাছে এসে পৌছলে। সে ভয়ে ভয়ে সেই কুঠরীর মধ্যে ঢুকল। দেখল সেখানে একটা আয়না, একটি কাঠি আছে। তাছাড়া পুরো ঘরে আর কিছু নেই। সে প্রথমে কাঠিটা হাতে নিয়ে ভাবল ইস আমার এখনো প্রচন্ড খিদে পেয়েছে যদি এতাকাঠি না হয়ে কোন খাবার হতে।। আর সাথে সাথে দেখল এক আশ্চর্য ব্যাপার তার সামনে অনেক খাবার। সে ভয়ে পেয়ে গেল। কিন্তু দৃঢ় মনোবল নিয়ে এবার আয়নাটা হাতে নিল দেখল সেটার কাচে প্রচুর ময়লা। সে তার হাত দিয়ে সেটা পরিষ্কার কতে গিয়ে সেখানে আবার আর একটি অবিশ্বাস্য জিনিস দেখতেপেল।তার হাতের ছোয়ার সাথে সাথে আয়নাটার উপর থেকে কাঁচ খুলে একটা শামুকে পরিণত হলো। আর আয়নাটা ভিতরে আরেকটা কাঁচ রয়ে গেলো।একটা শামুক ভেঙ্গে একটা পরী বের হয়ে এলো বললো আজ থেকে আমি তোমার দাসা তুমি যা চাইবে তাই তোমাকে দেবো। অনেক বছর আগে আমাকে এক দুষ্ট এই আয়নায় বদি করেছিল। আর সে বলেছিল যদি কোন রাজকন্যা আমার আয়নাটা হাতে স্পর্শ করে তবেই তুমি মুক্ত হবে। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, তা তুমি এখানে কেন এসেছ। আর কোথা হতে এসেছো। মিতা পরির নিকটে সব ঘটনা বলল। আর হাতজোড় করে বলল তার বোনকে যদি সে ফিরিয়ে দেয় তবে তার আর কিছুই চাইনা। সে বলল ঠিক আছে তাহলে এই আয়না চোখের সামনে ধরে তোমার বনের কথা ভাবো তাহলেই দেখতে পাবে সে কোথায়। মীতা দেখল সত্যি গীতা একটা নদীর পাশে ক্লান্ত হয়ে বসে আছে। সে বলল আমি সেখানে কী- করে যাব। পরিটা বলল এই কাঠিকা হাতে নিয়ে ভাব যে তুমি ওখানে যাবে আর পরিটটা মিতাকে একট ঘন্টা দিয়ে বলল যদি তোমার আমাকে প্রয়োজন হয় ঘন্টাটা বাজলে আমি ঠিক সে তোমার সামনে পৌঁছে যাব। মিতা তাকে ধন্যবাদ দিয়ে কাঠী নিয়ে গীতার কথা ভাবলো হঠাৎ তার মাথাটা যেন প্রচন্ড ব্যাথা পেল ফলে চোখ বন্ধ করে নিল। চোখ খুলে দেখল সে গীতার পেছন দাঁড়িয়ে সে গীতাকে ডাকল। গীতা মিতাকে দেখে কান্না থামতে পারলনা। সে নিজের ভুল বুঝতে পারল। তারা বাড়ির পথে হাটতে লাগল। মিতা তার ম্যাজিক কাঠীর কথা ভুলে গিয়েছিল। পথে দেখল দুইটি ছেলে খুব ক্লান্ত হয়ে বসে আছে। গীতা তাদের সমস্যার কথা জানতে চাইলে তারা বলল তারা এক রাজার পুত্র। কিন্তু তাদের বাবা মারা যাওয়ায় মন্ত্রী সব দখল করে নিয়েছে। মিতা আর গীতা, ওই ছেলে দুটোকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো । কিন্তু তারা কোন পথে এসছে ভুলে গেছে।কোন ভাবেই সঠিক রাস্তা আন্দাজ করতে পারছে না।ক্লান্ত হয়ে এক জায়গায় বসে পড়লো। হঠাৎ গীতা মীতাকে বলল তার হাতের কাঠী, আয়না ঘণ্টা এসব কী। মিতার পরীর কথা মনে হলো। সে ঘন্টা বাজিয়ে পরীকে ডাকল। বলল আমরা সবাই কী ভাবে বাড়ি ফিরব। পরী সবাইকে কাঠিটা একসাথে দুয়ে নাড়াতে বলল আর বাড়ির কথা ভাবতে বললো। সবাই ছুঁইতে না ছুঁইতেই মাথা ঘুরে উঠলো সবার আর সাথে সাথে বাড়ি পৌঁছে গেল।এইদিকে দুই বোনকে হারিয়ে রাজা প্রায় মৃত্যু শয্যায় ছিলেন। তিনি যেন তাদের পেয়ে সুস্থ হয়ে গেলেন। মিতা রাজাকে সব ঘটনা খুলে বলল। গীতা অনুতপ্ত হয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইলো। রাজা ঐ দুই রাজপুত্রের সাথে দুই মেয়ের বিয়ে দিলেন। তার সকল সম্পতি দুই মেয়েকে ভাগ করে দিলেন। রাজ্যে আবার সুখ ফিরে এলা।
<-------সমাপ্ত-------->
লেখিকা পরিচিতি
- মোসাঃ সাদিয়া আফরিন বিলকিস,
- পিতা মোহাঃবাবুল ইসলাম,
- মাতা মোসাঃসায়েরা খাতুন
- গ্রামঃগঙ্গারাম্পুর
- উপজেলাঃ শিবগঞ্জ
- জেলাঃচাঁপাইনবয়াবগঞ্জ
- ধর্মঃমুসলিম
- জাতীয়তাঃবাংলাদেশী
- পেশাঃনার্সিং শিক্ষার্থী (১ম বর্ষ)
Join the conversation